গুয়ের্নিকা

         গুয়ের্নিকা, পাবলো পিকাসো।




যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিল্প চিরকালই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাবলো পিকাসোর গুয়ের্নিকা ছবির দীর্ঘ ক্যানভাস যেন সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিমণ্ডল, শত নরনারী এবং শিশুর আর্তচিৎকার,  হাজার হাজার সর্বহারার দিকবিদিক ছুটোছুটি ও মৃত্যুর এক নিখুঁত খসড়া।

ক্যানভাসের ছত্রে ছত্রে ফুটে ওঠে  স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় গুয়ের্নিকা শহরের উপর নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন নাৎসি বর্বরতার ভয়াবহতা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পিকাসোর স্টুডিওতে এক নাৎসি অফিসার পিকাসোর  এই ছবিটি দেখে জিজ্ঞাসা করেন ‘এটা কি আপনার কাজ?’

উত্তরে পিকাসো বলেছিলেন ,‘না, এটা আপনাদের কাজ।’

কিন্তু এই ছবির মূল উপজীব্য কি? 

যদি ছবিটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখতে পাবেন, চওড়া  চোখওয়ালা এক অদ্ভুত ষাঁড় এর দিকে মুখ করে আর্তনাদ করছে এক মহিলা, যার জিভের বদলে তিনটে তীক্ষ্ণ ছোড়া বিদ্যমান, এবং যার কোলে একটি মৃত বাচ্চা। ফ্যাসিবাদী আক্রমণের প্রতিনিধিত্বকারী রূপকার্থে ব্যবহৃত ষাঁড় এর বিরুদ্ধে সাধারণ অসহায় মানুষের স্বরূপ ওই মহিলাটি যেন তীক্ষ্ণ আর্তনাদের মাধ্যমে নিজের সবটুকু ক্ষোভ উগড়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

ছবিটা আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবেন যে ,একটি আহত ঘোরার মাথার নিচে এক সৈনিক, যার হাতে যুদ্ধক্লান্তির প্রতীক হিসাবে একটি ভাঙা তলোয়ার এবং অপর হাতে শান্তির প্রতীক হিসেবে একগুচ্ছ ফুল।

এই গুয়ের্নিকা  ছবিকে আমরা সারা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিরোধী সাংস্কৃতিক দলিল হিসেবে গণ্য করতে পারি, যাতে অবস্থিত আর্তনাদরত নারী, মৃত শিশু, বীভৎস ষাঁড়, মৃত যোদ্ধা, ভাঙ্গা তলোয়ার, ছেড়া সংবাদপত্র... যেমন সারা পৃথিবীতে নেমে আসা ফ্যাসিবাদী শক্তির আগ্রাসনের বার্তা বহন করছে ,যুদ্ধের মাধ্যমে কিভাবে প্রাণ প্রকৃতি সভ্যতা সামগ্রিক ধ্বংস সাধন হয় তার নির্যাসকে উপস্থাপিত করছে, তেমনি বাতি, একগুচ্ছ ফুল, এগুলো যেন খানিকটা শান্তির বার্তাবহন করে আমাদের মনে আশা যোগাচ্ছে, বাতির আলো যেন নৈরাশ্যের অন্ধকার দূর করে দিচ্ছে।

গুয়ের্নিকা আজকের সময়েও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক... ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনগুলোর মুখ, শতাব্দী জুড়ে আর্তমানবতার দলিল। পিকাসোর এই শিল্পকর্ম আজও ক্লান্তিহীনভাবে পক্ষ নিচ্ছে মুক্তিকামী জনতার...,কাশ্মীর থেকে মনিপুরের, গুয়েরনিকা থেকে নাগাসাকির, হিরোশিমা থেকে প্যালেস্টাইনের...।


[দীপ্তমান ঘোষ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ]

Comments

Popular posts from this blog

MY FIRST BLOG.

একেই বলে শুটিং (সত্যজিৎ রায়)

বাংলাদেশের আগুনপাখি