নবারুনের জন্মদিন উপলক্ষে

কে নবারুণ? কী নবারুণ?





নবারুণ হলেন অপমানিত, অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিতদের আইকন.....; নিষ্ফলা, ধূসর ,কোণঠাসা বেড়ালের মতো ফ্যাসফ্যাসে , নিঃস্ব ,রিক্ত, শূন্য, সর্বহারাদের আইকন.....;সর্বস্বান্ত, ভিখারি, বেকার,দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষদের আইকন।

 ‘নবারুণ কবির চেয়েও বেশি আইকন, একজন গড়পড়তা গদ্যলেখকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৈপ্লবিক ভূমিকা তাঁর... এবং সাহিত্যিকের চেয়েও বেশি বড় সংগঠক। ভাষাবন্ধন একটা আন্দোলন নিশ্চয়তই।’

নবারুণের উপন্যাস একটা আগুনের স্রোত, যা একজন ছাত্রের রাজনৈতিক বোধকে তীব্রভাবে উসকে দেয়, একজন যুবকের রাজনৈতিক-সামাজিক- দার্শনিক সত্তাকে, তার চিন্তন-মননের উৎকর্ষকে, তার মস্তিষ্কের বৌদ্ধিক কর্ষণকে লেলিহান শিখার মত টানটান এবং ধকধকে উত্তেজী করে রাখে.....এবং প্রতিবাদী সত্তাকে তার শিরদাঁড়ায় প্রোথিত করে।


কাদের কথা বলে নবারুণ?

যাদের কথা কেউ বলে না, সভ্যতা যাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ব্রিজের নিচে বাঁশের খুটির তরজার বেড়ার কালো-পলিথিনের ছাদওয়ালা ঝুপড়িতে যারা দিনযাপন করে...;মশা মাছি, কীটপতঙ্গ এবং মলমূত্র মাখা আস্তাকুড়ের জঞ্জালের ওপর দশ বাই বারো ফুটের নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে খুপড়িতে যারা চৌবাচ্চার তেলাপিয়ার মত দিন কাটায়..., রোদে, ঝড়-জলে, ঘামে, শীতে, বর্ষার ক্লেদে নিস্তারহীন যাদের জীবন যাপন...;যারা আজীবন এই ভয়ানক নিষ্ঠুর জীবনের ঠেলা ঠেলে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে.....; নবারুণ তাদের কথা বলে।। সেই কারণেই হয়তো নবারুনের ভাষা অলৌকিক ডানার কুঁড়ির মত মিষ্টি নয়; নবারুনের ভাষা অসহায়, দরিদ্র, অবহেলিত মানুষের মত কর্কশ, খিস্তিসমৃদ্ধ। 

নবারুণ বুঝতে পেরেছিলেন যে; যে পতাকা ন্যাস্ত করা হয়েছে তার কাঁধে, তা বহন করা, উড়িয়ে নিয়ে চলা এবং আকাশের গায়ে লাল চিহ্ন এঁকে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন যে অসম্ভব শক্তি, তা রয়েছে তার বিরল, অতলস্পর্শী, ধকধকে তেজিয়ান আধারে ....; এবং সেই কারণেই তিনি আলগোছে পদাচরণ না করে প্রতিমুহূর্তে নিজের বিপ্লবী চিন্তাস্রোতকে রক্ষা করেছেন, লালন করেছেন ।তারই ফলস্বরূপ প্রান্তিক মানুষ গুলোর কথা, সাধারণের কথা, নিপীড়িতের কথা যথাযথতম সুরে অব্যর্থতম রেখায় প্রবাহিত হয়েছে তার লেখনীতে। বিস্ফোরণের মতো অগ্নিগর্ভ সত্য, তরবারির মতো যুক্তি, এবং ক্ষারের মতো বোধ সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার উপন্যাসে।


আজ বিপ্লবী রাজনীতির এই দুঃসময়ে, ছাত্র রাজনীতির এই ডিপ্রেশন পিরিয়ডে আমাদের নবারুণ কে খুবই প্রয়োজন.... যার হাত ধরে এই শিথিল সমাজে আবার হারবার্টের চুল্লি বার্স্ট করবে, অন্ধ-বোবা সমাজে জমে থাকা ভিজে বারুদের স্তুপে পেট্রোল ঢেলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বালিয়ে পোড়ানো হবে ফ্যাসিস্টদের কুশপুতুল, বিনুর রক্তের দাগের উত্তরাধিকার বহন করবার জন্য এগিয়ে আসবে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, লাখ লাখ যুবক-যুবতী।

সেই দিন আর বেশি দেরি নেই....,যেদিন সাতসকালে নোংরা গলিঘুজি থেকে, শতবৃক্ষশিকড়সমৃদ্ধ ধজা-পচা বাড়ি থেকে, বিদঘুটে নোংরা পেচ্ছাপখানাসমৃদ্ধ ভাঙ্গা বেঞ্চিওয়ালা তেকোনা পার্ক থেকে, ছোট্ট পান-বিড়ির গুমটি থেকে, শত শত ফ্যাতাড়ু বেরিয়ে আসবে....., দলে দলে আন্দোলিত হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বজুড়ে ।

ফ্যাতাড়ু, চোক্তার,ভোদি, দন্ডবায়সরা সমবেতভাবে টুঁটি টিপে ধরবে অত্যাচারী শাসকদের, নোংরা খেলায় মেতে ওঠা পুঁজিবাদীদের।ফ্যাতাড়ুরা পেটো চার্চ করে ধ্বংস করে দেবে সাউথসিটি, জলবোমা চার্চ করবে এলিট বার- গুলোয়...., হেগে মুতে আস্তাকুড় বানিয়ে দেবে ফাইভ স্টার হোটেলগুলোকে....।

অত্যাচারী, পুঁজিবাদী, ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলোকে ধ্বংস করে আকাশে উড়বে শান্তির পতাকা, স্বাধীনতার পতাকা, সাধারণের পতাকা। রক্তের রঙে নয়, কৃষ্ণচূড়ার রঙে লাল হয়ে উঠবে আকাশ.....।

বিনুর সঙ্গে সমস্বরে উচ্চারিত হবে.....

“আমি দেখতে পাচ্ছি, আমার চোখের সামনে আমার এতকালের দেখা পুরনো দুনিয়াটা পাল্টে যাচ্ছে.., ভেঙে চুরে তছনছ হয়ে গুঁড়ো গুড়ো হয়ে ঝরে পড়ছে পুরনো দিনগুলো... ঝড় আসছে একটা...ঝড়....ঝড়....”।।


[দীপ্তমান ঘোষ,২০২৪'


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ]

Comments

Popular posts from this blog

MY FIRST BLOG.

একেই বলে শুটিং (সত্যজিৎ রায়)

বাংলাদেশের আগুনপাখি