স্যাপিয়েন্স ( Yuval Noah Harari)

আজকে যে বই নিয়ে আমি আলোচনা করব, তা হল ডক্টর ইউভাল নোয়া হারারি এর লেখা.. স্যপিয়েন্স। 
                              আজকের ব্লগ টাকে আমার
 “Book Analysis”  সিরিজের প্রথম এপিসোড বলা যায়।

                          বই ভিত্তিক ব্লগগুলোর মাধ্যমে বইয়ের ভাবধারা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশের চেষ্টা করব, বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা গুলোকে নিখুঁত বিশ্লেষনের চেষ্টা করব , লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমার দর্শনের মিল আছে, না মতবিরোধ হচ্ছে, তা ক্রমাগত পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করব। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে লেখার মান হয়তো খুব উৎকৃষ্ট হবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে লেখার উৎকর্ষ বাড়াবার এবং আধুনিকতা আনবার চেষ্টা করব। 
প্রকৃতপক্ষে আমার পছন্দের বইগুলো সম্পর্কে নিজের মত করে কিছু লিখে রাখাই আমার উদ্দেশ্য।  
বইটার প্রথম অধ্যায় দিয়ে আজকে শুরু করছি, আস্তে আস্তে এক একটা অধ্যায় add করব। Let's start.
( এই বইটা থেকে পরপর টপিক এবং কিছু তথ্য সংগ্রহ করে বাকিটা নিজের ভাবধারার সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করছি)
প্রথমেই আসি লেখকের পরিচয়ে। ভদ্রলোক অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি করেছেন, সুতরাং ওনার জ্ঞানের ভাঁড়ার নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনা। 

        জ্ঞানের বিপ্লব (Cognitive Revolution)

1. An animel of no significance.

জ্ঞানের বিপ্লব নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিপ্লব। এই জ্ঞানের বিপ্লব বা বৌদ্ধিক বিপ্লব শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে। তার অনেক..অনেক পরে, আজ থেকে প্রায় বারো হাজার বছর আগে agricultural revolution (কৃষিবিপ্লব) শুরু হয়। তারও বহু পরে, আর আজ থেকে মাত্র ৫০০ বছর আগে  গজিয়ে উঠলো scientific revolution. 
এই বিপ্লবগুলো কিভাবে আদিম মানুষ থেকে আধুনিক মানুষে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করলো, এই বইটা তারই গল্প বলে।  
আধুনিক মানুষ প্রথমবার উদ্ভুত হলো প্রায় আড়াই মিলিয়ন বছর আগে, অর্থাৎ প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে। 

টাইম মেশিনে চেপে আজ থেকে প্রায় কুড়ি লাখ বছর আগের পূর্ব আফ্রিকায় যদি একবার ঘুরে আসা যেত, তাহলে হয়তো “ অতি সাধারণ মানব শিশু, বাচ্চার চিন্তায় উদ্বিগ্ন মা,বদমেজাজি যুবক, একটু শান্তির আশায় ঘুরে বেড়ানো বৃদ্ধ- বৃদ্ধা , সুন্দরী যুবতীকে প্রেম নিবেদনরত যুবক, এবং এক বৃদ্ধা, যে এই সব কিছু প্রত্যক্ষ করেছে.....” এইরকম একটা ক্যানভাস দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু এই সম্পূর্ণ চিত্রপটে অসাধারণ বলতে কিছু নেই, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জি ,হাতি কিংবা বেবুন বা অন্যান্য সাধারণ পশু পাখির কোনো পার্থক্য নেই। ইন্টেলেকচুয়ালিটির বিন্দুমাত্র স্ফুরণ নেই। 
এবার আসা যাক অত্যাধুনিক মানুষ হিসেবে আমাদের এই বিবর্তনের প্রসঙ্গে।  আদিম বুনো মানুষ থেকে আজকের অত্যাধুনিক মানুষের এই বিবর্তন কি একটা স্ট্রেট লাইনের মত? 
এর উত্তর হলো,“ না”। এই ভুল ধারণা বহু বছর ধরে বহু মানুষের মনে প্রথিত ছিল। তাহলে মানুষের বিবর্তন হলো কিভাবে? এর আগে কি মানুষের অন্য কোনো জ্ঞাতিভাই ছিল? সেই অন্য জেনাসের বুনো মানুষগুলোর সঙ্গে কি আমাদের জেনাসের যৌনতা কিংবা সঙ্গম হয়েছিল? 
এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রথমে “জ্ঞাতিভাই” কনসেপ্ট এর ক্ল্যারিটি প্রয়োজন।
ছেলেবেলাতে আমরা বায়োলজিতে বিভিন্ন প্রাণীর বিজ্ঞানসম্মত নাম ( scientific name) পড়েছি। 
Example: Homo sapiens.
[এখানে  Homo হলো genus (গণ) এবং sapiens হল species (প্রজাতি)]

 আমরা জানি,  সাধারণত সমপ্রজাতির দুটি প্রাণী পরস্পরের সঙ্গে সেক্স করলে স্বাভাবিক বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে।
যেমন- দুটি বিপরীত লিঙ্গের ঘোড়া পরস্পরের সঙ্গে সঙ্গম করে একটি ছানা ঘোড়া উৎপাদন করে।
এবার ব্যাপার হলো, Same genus (গণ ) এর দুটি প্রাণী পরস্পরের সাথে সঙ্গম করলে সেক্ষেত্রেও বাচ্চা উৎপাদন হতে পারে। দুটি প্রাণীর  Genus  same হবার অর্থ হল সেই জন্তু দুটি পরস্পরের জ্ঞাতি ভাই। 
অর্থাৎ, এই জ্ঞাতি দুটি পরস্পরের সঙ্গে সেক্স করলে তারাও একটি বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু সেই বাচ্চা সাধারণত বন্ধ্যা হয়। অর্থাৎ সেই বাচ্চা বংশবিস্তারে অক্ষম হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ঘোড়া এবং গাধার সঙ্গমে খচ্চর তৈরি হয়। এবং খচ্চর sterile . ঠিক একইভাবে বাঘ ( panthera tigris) এবং সিংহ ( panthera leo) পরস্পরের সাথে সেক্স করে টাইগণ বা লাইগার উৎপাদন করতে সক্ষম।  কারণ এদেরও জেনাস-দুটো একই । Panthera. 
ঠিক একইভাবে কুকুর, হায়না এবং শিয়াল পরস্পরের জ্ঞাতিভাই।  হাতি , ম্যামথ এদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রযোজ্য। 
এবার প্রশ্ন হল এতক্ষণ ধরে আমাদের সাপেক্ষে নিম্ন শ্রেণীর কিছু জন্তু জানোয়ার নিয়ে এতখানি আলোচনা করা অর্থ কি?
কারণ একটাই... মানুষেরও কি এরকম কোনো জ্ঞাতিভাই ছিল? 
কারণ সাধারণত ভিন্ন জেনাসের প্রাণীদের সেক্সে বন্ধ্যা সন্তান উৎপাদিত হলেও এই ফর্মুলার ব্যতিক্রমও আছে। যেমন--বুলডগ এবং স্প্যানিয়েল। 
এবার প্রশ্ন হল আমরা অত্যাধুনিক মানুষেরা কি সেই জ্ঞাতি ভাইদের সঙ্গমে উৎপাদিত প্রজাতি নাকি বিশুদ্ধ প্রজাতি? 

এই গল্পের সূত্রপাত হয়েছিল এপ(ape)  নামক এক দানবীয় বানরের থেকে। বানরদের এই সুবিস্তৃত ফ্যামিলিতে এপ ই হল সবথেকে বৃদ্ধ। মানুষের জ্ঞাতিভাই বলতে আমাদের চোখের সামনে এখন শুধুমাত্র রয়েছে শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাং ওটাং। আমরা নিজেদেরকে জন্তু হিসেবে পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করি,  কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা গ্রেট এপ এর বিশাল ফ্যামিলির একটা অবিচ্ছেদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

“Just 6 million years ago a single female Ape had two daughters. One became the ancestor of all chimpanzees the other is our own  grandmother.”

উপরের লাইন দুটো সরাসরি বই থেকে কোট করলাম। বারবার পড়ে চোখটা বন্ধ করলে গায়ে কেমন কাঁটা দেয়। যেন সেই মা-এপের শিরদাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে খোদিত ছিল আধুনিকতর মানবজাতির শিহরণ জাগানো ইতিহাস।

প্রকৃতপক্ষে মানুষ বা HUMAN বলতে কিন্তু কখনোই শুধুমাত্র আমাদের indicate করা হয় না। মানুষ বলতে আমাদের সেই কুড়ি লক্ষ বছর আগেকার জ্ঞাতি ভাইদের কেও বোঝানো হয়।
“To clarify this point, I will often use the term ‘sapiens’ to denote members of the species ‘Homo sapiens', while reserving the term ‘human' to refer to all members of the genus ‘Homo'.”

এই হিউম্যান এর প্রথম উদ্ভব হল আজ থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায়। এই এপ-দের বলা হয় ‘Australopithecus’. (Which means Southern ape.) 
এরপর এদের থেকে আস্তে আস্তে জন্ম নেয়  মানুষের জ্ঞাতি ভাইয়েরা। মানুষের সেই জ্ঞাতি ভাই ( same genus, different species) দের নাম আমি  উল্লেখ করছি।👇

Homo neanderthalensis (নিয়েন্ডারথাল),
Homo erectus, 
Homo soloensis, 
Homo floresiensis, 
Homo denisova, (ডেনিসোভা)
Homo rudolfensis
Homo  ergaster,
Homo  sapiens. ( উন্নত মানুষ)

“ The members of some of these species were massive and others were dwarves. Some were fearsome hunters and others meek plant- gatherers. Some lived only on a single island, while many roamed over continents. But all of them belonged to the genus Homo. They were all human beings.”
হারারির এই প্যারাগ্রাফ আমাদের মূল বা  শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। সৃষ্টির সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই দীর্ঘ টাইমলাইনের কঠিন থেকে কঠিনতর যুদ্ধগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। নাথিং থেকে এভরিথিং এর প্রতি এই জার্নির সাক্ষী আমরা... পুরো ব্যাপারটাকে গোড়া থেকে জেনে প্রত্যক্ষ করবার বুদ্ধি একমাত্র আমাদের মধ্যেই আছে... মানব সভ্যতার স্বয়ংসম্পূর্ণ ইতিহাসকে আত্মস্থ করবার ক্ষমতা একমাত্র আমাদেরই আছে।


                   (  29/ 7/ 2023.)
To be continued.......  


Comments

Popular posts from this blog

MY FIRST BLOG.

একেই বলে শুটিং (সত্যজিৎ রায়)

বাংলাদেশের আগুনপাখি